রাসুল সাঃ এর দেয়া আয়াত আলীর বহন করার ঘটনা বিস্তারিত

সুরা তওবা ও হযরত আবু বকর। পবিত্র কোরআনে সুরা তওবার প্রথম আয়াতগুলো নবম হিজরীর শেষ দিকে নাজিল হয় । মোফাসেসদের বর্ননা মতে রাসুল (সাঃ) এই সব আয়াত হজ্ব মওসুমে পবিত্র কাবা গৃহে আগত সম্মানীত হাজীদের উদ্দেশ্যে ঘোষনা করার জন্য প্রথমে হযরত আবু বকরকে দায়িত্ব দেন । কিন্ত আল্লাহর নির্দেশে পথিমধ্যে থেকে হযরত আবু বকরকে দেয়া দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে হযরত আলীকে (আঃ) দায়িত্ব দেয়া হয় ।

সঙ্গত কারনেই এখানে একটি প্রশ্ন চলে আসে যে , মহান আল্লাহর দৃষ্টিতে পবিত্র কোরআনের গুটিকতক আয়াত বহনের জন্য যিনি যোগ্যতা রাখেন না , তিনি কিভাবে রাসুলের (সাঃ) ইন্তেকালের পর পরই নবীজীর (সাঃ) স্থলাভিষিক্ত হতে পারেন ?

যাইহোক , ঘটনার বিস্তারিতে চলুন ---

মুসনাদে হাম্বাল বর্ননা করেছেন যে ,
নবম হিজরীতে মহানবী (সাঃ) হজ্বের মওসুমে হযরত আবু বকরকে সুরা তওবার কয়েকটি আয়াত প্রদান করে মক্কার কুরাইশদের উদ্দেশ্যে তা পাঠ করে শুনানোর নির্দেশ দিলেন । রাসুলের (সাঃ) নির্দেশমত হযরত আবু বকর মক্কার কাবা গৃহের উদ্দ্যেশে রওয়ানা হয়ে গেলেন ।
এর কিছুক্ষন পরেই হযরত জীবরাইল (আঃ) আল্লাহর একটি বিশেষ বার্তা নিয়ে রাসুলের (সাঃ) নিকট আগমন করলেন । হযরত জীবরাইলের (আঃ) নির্দেশ পেয়ে কালবিলম্ব না করে নবীজী (সাঃ) হযরত আলীকে (আঃ) নিজের বাহনটি দিয়ে বললেন , "যেখানেই আবু বকরকে পাও , তার হতে তা গ্রহন করে তুমি নিজে তা পাঠ করে শোনাবে " ।

রাসুলের (সাঃ) পক্ষ থেকে নির্দেশিত হয়ে হযরত আলী (আঃ) জুহফা নামক স্থানে হযরত আবু বকরের সাথে মিলিত হলেন এবং তার নিকট থেকে আয়াতগুলো গ্রহন করেন এবং নবীজীর (সাঃ) নির্দেশ মোতাবেক তা প্রচার করার জন্য মক্কা অভিমুখে রওয়ানা হয়ে গেলেন ।

আহম্মাদ ইবনে হাম্বল এ প্রসঙ্গে আরও বলেন যে ,
কিছুটা হতবাক এবং ভারাক্রান্ত অন্তর নিয়ে হযরত আবু বকর মদীনাতে ফিরে এলেন এবং নবীজীর (সাঃ) নিকট ফিরে এসে প্রশ্ন করলেন , "ইয়া রাসুল্লাল্লাহ ! আপনার নির্দেশমত আমি রওয়ানা হলাম । পথিমধ্যে হযরত আলী এসে আমার নিকট থেকে দায়িত্বভার বুঝে নিলেন । আমার ব্যাপারে আল্লাহর নিকট থেকে কিছু নাজিল হয়েছে কি ?"
রাসুল (সাঃ) বললেন , "না , তবে জীবরাইল (আঃ) এসে আমাকে বলেছেন , এ দায়িত্ব যেন স্বয়ং আমি পালন করি অথবা ঐ ব্যক্তি যে আমার আল (আমার রক্তজ বংশ) থেকে তাঁকে প্রচার করতে হবে " ।
সূত্র - তাফসীরে কানজুল ঈমান ,পৃ- ৩৪৬ , ৩৪৭ (আহমাদ রেজা খাঁ বেরেলভী) , তাফসীরে নুরুল কোরআন , খন্ড-১০ ,পৃ- ১০৬ (মাওঃ আমিনুল ইসলাম ) , সীরাতে ইবনে হিশাম , খন্ড-৪ ,পৃ- ২০০ - ২০৪ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) , সহীহ বুখারী , খন্ড-৪ , হাদিস- ৪২৯৪ , ৪২৯৫ (আধুনিক) , কাতেবনে ওহী , পৃ-১৫৫ (ইঃফাঃ) , তাফসীরে দুররে মানসুর , খন্ড-৩ ,পৃ- ২০৮ / শেখ আব্দুর রহীম গ্রন্থাবলী , খন্ড-১, পৃ- ৩০৪ (বাংলা একাডেমী ) / ইয়ানাবিউল মুয়াদ্দাত , পৃ- ৩৩৮ (উর্দু) / মুসনাদে হাম্বল, খঃ-১,পৃ- ১৫১ , খঃ-৩,পৃ- ২৮৩, খঃ-৪,পৃ- ১৬৪ / ইযাযাতুল খিফা (শাহ ওয়ালীউল্লাহ , খন্ড - ১ , পৃ- ৪০৯ (উর্দ্দু) / ইয়ানাবিউল মুয়াদ্দাত , পৃ- ৩৩৮ (উর্দ্দু) / আরজাহুল মাতালেব , পৃ- ৮১৪- ১৮ (উর্দ্দু) / বাইহাক্কী , পৃ- ২২৪ / কানজুল উম্মাাল , খন্ড - ১, পৃ- ২৪৬ / মুসনাদে হাম্বল , খন্ড - ১ , পৃ- ১৫১ , খন্ড- ৩ , পৃ- ২৮৩ / খন্ড- ৪ , পৃ- ১৬৪ / কিফায়াতুত তালিব , পৃ- ১২৫ / মাজমাউজ জাওয়াবেদ , খন্ড - ৭ , পৃ- ২৯ / সাওয়ায়েকে মোহরেকা , পৃ- ১৯ / জামেউল বায়ান , (তাবারী) খন্ড - ১০ , পৃ- ৪১ / খাসাইসুল আলাভী , পৃ- ১৪ / যাখাযেরুল উকবা , পৃ- ৬৯ / বিয়াজুন নাজরাহ , পৃ- ১৪৭ / আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া , খন্ড - ৫ , পৃ- ৩৮, খন্ড - ৭, পৃ- ৩৫৭ (মিশর) / তাফসীরে ইবনে কাসীর, খন্ড - ২ , পৃ- ৩৩৩ (মিশর) ।

সুপ্রিয় পাঠক ,
মহান আল্লাহর প্রতিটি কার্যের পিছনে অবশ্যই শিক্ষনীয় কিছু থাকবেই থাকবে ।
মহানবী (সাঃ) পবিত্র ক্বাবা গৃহের পবিত্রতা রক্ষার্থে আল্লাহর নির্দেশে এমন কাউকে প্রচারের দায়িত্ব দিতে হবে যে , ঐ ব্যক্তি জীবনে এক মুহূর্তের জন্য মূর্তির সামনে মাথা নত করেনি ।
ঐ ব্যক্তিকে অবশ্যই আল্লাহ কতৃক ঘোষিত পুতঃপবিত্র মাছুম বা নিষ্পাপ হতে হবে ।
পবিত্র ক্বাবা ঘরের পবিত্রতার ঘোষনা পবিত্র ব্যক্তির মাধ্যমেই হওয়া উচিৎ ।
এ ঘটনার মাধ্যমে এটাই আল্লাহ আমাদের শিক্ষা দিলেন ।
সাথে সাথে এটাও প্রমানিত হল যে ,
নবীজীর (সাঃ) জীবদ্দশায় পবিত্র কোরআনের কয়েকটি মাত্র আয়াত প্রচার করার যোগ্যতা যিনি রাখেন না , তিনি নবীজীর (সাঃ) ইন্তেকালের পরে মহানবীর (সাঃ) স্থলাভিষিক্ত খলীফা অথবা সম্পূর্ন কোরআন প্রচারের দায়িত্ব কিভাবে পায় ?
সমস্ত সাহাবাগন এই বিষয়টি সম্বন্ধে সম্পূর্ন একমত যে , জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি হযরত আলী (আঃ) কস্মিনকালেও মূর্তিপূজা , মূর্তি পুজার পুরোহিত ছিলেন না ।
কারন হযরত আলী (আঃ) এর জন্ম হয়েছে খোদ ক্বাবা গৃহের এক্কেবারে অভ্যন্তরে ও উনি এই দুনিয়া ত্যাগ করেছেন মসজিদ থেকে ।
জন্ম থেকে লালন পালন , শিক্ষা দীক্ষাসহ সকল কিছুই মহানবীর (সাঃ) হাতেই সম্পাদিত হয়েছে ।

মহানবী (সাঃ) বলেছেন যে , " -- অামি জ্ঞানের নগরী এবং আলী সেই নগরীর প্রবেশ দ্বার , যে কেউ আমার জ্ঞানের সন্ধান করে সে যেন আলীর দ্বার প্রবেশ করে -- " ।
এই প্রসংগে মহানবী (সাঃ) আরও বলেছেন যে , "আলী আমার ভাই এবং সে আমা থেকে এবং আমিও আলী থেকেই আর সে আমার জ্ঞানের দরজা এবং আমার স্থলাভিষিক্ত ও উত্তরসূরী -- "।

তথ্যসূ্ত্র - সহীহ মুসলিম , খন্ড - ১ , পৃ- ২৩ (মোহাম্মাাদীয়া লাইব্রেরী) / কাতেবানে ওহী , পৃ- ২০৭ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন , বাংলাদেশ) / আশারা মোব্বাশারা , পৃ- ১৯২ (এমদাদীয়া লাইব্রেরী) / হযরত আলী , পৃ- ১৫ (এমদাদীয়া লাইব্রেরী) / মুস্তাদরাক হাকেম , খন্ড - ৩ , পৃ- ১২৬ / উসুদুল গাবা , খন্ড - ৪ , পৃ- ২২ (মিশর) / আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া , খন্ড - ৭ , পৃ- ৩৫৭ , খন্ড - ৮ , পৃ- ৩৫০ (মিশর) / ইয়ানাবিউল মুয়াদ্দাত , পৃ- ১৮৩ / আস সাওয়ায়েকে মোহরেকা , পৃ- ৩৭ (মিশর) / তারিখে কামিল , খন্ড - ৪ , পৃ- ২২ / তাফসীরে তাবারী , খন্ড - ৩ , পৃ- ১৭১ (মিশর) / মাকতালুল হোসাইন , খন্ড - ১ , পৃ- ৪৩ / খাতিব খাওয়ারেজামি মানাকেব ,পৃ- ৪৯ / আলীফ বাস , খন্ড - ১ , পৃ- ২২২ (মোঃ আনদুলোসি) / হিলিয়াতুল আউলিয়া , খন্ড - ১ , পৃ- ৫৫ / শাওয়াহেদুত তানযিল , খন্ড - ২ , পৃ - ৩৫৬ / আরজাহুল মাতালেব , পৃ - ১৮৪ / তাসকিরাতুল খাওয়াজ , পৃ - ৫৩ / কেফায়াতুত তালেব , পৃ - ৯৮ / তাফসীরে দুররে মানসুর , খন্ড - ৬ , পৃ - ৩৭৯ (মিশর) / যাখায়েরুল উকবা , পৃ - ৭৭ (মিশর) / জামেউস সাগীর , খন্ড - ১ , পৃ - ৩৭৪ (মিশর) / উমদার্তুল কারী ফি শারাহ সহীহ বুখারী , খন্ড - ৭ , পৃ - ৬৩১ (মিশর) / কানজুল উম্মাাল , খন্ড - ১৫ , পৃ - ১৩০ / মিরকাত , খন্ড - ১১ , পৃ - ৩৪৬ / ইস্তিয়াব , খন্ড - ২ , পৃ - ৪৬১ , খন্ড - ৩ , পৃ - ১১০২ (মিশর) / রেয়াজুন নাজরা , খন্ড - ১ , পৃ - ১২৯ / ফাইজুল কাদির , খন্ড - ৩ , পৃ - ৪৭ / তাদখিরাতুল হুফফাজ , খন্ড - ৪ , পৃ - ৪৭ / মাজমাউজ জাওয়াইদ , খন্ড - ৯ , পৃ - ১১৪ (মিশর) / হায়তুল হায়বান , খন্ড - ১ , পৃ - ৫৫ / তাহজিবুত তাহজিব , খন্ড - ৭ , পৃ - ৩৩৭ , খন্ড - ৬ , পৃ - ৩২০ / কানজুল উম্মাাল , খন্ড - ৬ , পৃ - ১৫৬ / মাতালেবাস সাউল , পৃ - ২২ / ফুসুলুল মহিম্মাা , পৃ - ১৮ / ইসাফুর রাগেবীন , পৃ - ১৫৬ / মুয়াদ্দাতুল কুরবা , পৃ - ৩০ / তারিখে বাগদাদ , খন্ড - ২ , পৃ - ৩৩৭ , খন্ড - ৭ , পৃ - ১৭৩ , খন্ড - ১১ , পৃ - ৪৮ (মিশর) / লিসান আল মিযান , খন্ড - ২ , পৃ - ১২২ / তারিখ আল খুলফা , পৃ - ১৭০ (মিশর) / সিরাজুল মুনির জামেউস সাগীর , খন্ড - ৩ , পৃ - ৫৩ / ইযাযাতুল খিফা (শাহ ওয়ালিউল্লাহ) , খন্ড - ২ , পৃ - ৫০৯ / আল গাদীর , খন্ড - ৬ , পৃ - ৬১ - ৭৭ ।

পক্ষান্তরে , নবীজীর (সাঃ) এর বেশীর ভাগ সাহাবাগন জীবনের বেশীর ভাগ সময় মুশরিক , মূর্তি পূজারী , মূর্তি পূজারীর পুরোহিত ছিলেন ।
পাঠক ,
আজন্ম লালিত সব কিছুই নতুন ভাবে চিন্তা করুন , প্লীজ ।

আজ আর নয় ,
ভাল ও সুস্থ থাকুন ,

ইয়া সাহেবুজ্জামান (আঃ) অাদরিকনী আদরিকনী ,
সালামুন আলাইকুম ইয়া সাহেবুজ্জামান (আঃ) ইবনে হাসান আসকারী (আঃ) ওয়া আজ্জিল ফারাজাহুম ,
আল্লাহুমা সাল্লে আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলে মুহাম্মাদ ওয়া আজ্জিল ফারাজাহুম ,
আল্লাহুম্মাল আন কাতালাহ আমিরিল মুমিনিন (আঃ) ।

-- মারেফাতে ইমামত ও বেলায়েত ,
মূল - মোঃ নাজির হোসাইন
পৃষ্ঠা - ৯১ , ৯২ ছায়া অবলম্বনে লিখিত ।


Subscribe Our Youtube Channel

Disqus Comments