চোরের হাত কাটা প্রসঙ্গে আলেমদের মতামত

আজকে আমরা যানবো চোর চুরি করলে তাকে কিভাবে শাস্তি দিতে হয় তার বিধান।  এখানে ইতিহাসের  একটি ঘটনা সংযুক্ত করা হলো যাতে আপনাদের বুঝতে সুবিধা হয়।

ঘটনা -- আব্বাসীয় খলীফার আমলে
এক ব্যক্তি চুরি করল । উভয় পক্ষের উপস্থিতিতে খলীফার প্রধান কাজীর দরবারে চুরির ঘটনা অত্যন্ত পরিস্কার ভাবে প্রমানিত হল । মাথা নীচু করে চোর নিজেও তা স্বীকার করেছিল ।
ফলে ঐ ব্যক্তি তৎকালীন আব্বাসীয় খলীফা মো’তাসেমের কাছে তার উপর আল্লাহর হুকুম জারী করে তাকে পবিত্র করার অনুরোধ করল ।

প্রধান কাজীর প্রদত্ত রায়ের ভিত্তিতে খলীফা সকল দরবারী ফকীহদেরকে একত্র করলেন ।
দরবারে যখন সকলেই উপস্থিত হলেন তখন খলীফা সকল দরবারী ফকীহগনের কাছে জানতে চাইলেন যে , চোর তার অপরাধ স্বীকার করেছে । এখন এই চোরের হাত কোথা থেকে কাটতে হবে ?
দাউদ নামে একজন বিখ্যাত ফকীহ তার মতামত ব্যক্ত করে বললেন যে , হাতের কব্জি থেকে কেটে ফেলতে হবে ।
খলীফা জিজ্ঞাস করলেন , এই কথার দলীল কি ?
ফকীহ জবাবে বললেন , কেননা তায়াম্মুমের আয়াতে হাত বলতে হাতের কব্জি পর্যন্ত বুঝান হয়েছে ।

" -- তোমরা যদি পানি না পাও , তাহলে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম কর এবং তোমাদের মুখ মন্ডল ও হস্তদ্বয়কে মাছেহ কর (মুছিয়া ফেল) -- "।
সূরা - নিসা / ৪৩ ।

দরবারে উপস্থিত কিছু সংখ্যক ফকীহ ওনার এই যুক্তি সমর্থন করলেন ।

কিন্ত কিছু সংখ্যক ফকীহ বললেন যে , না ,কনুই পর্যন্ত কাটতে হবে ।

খলীফা মো’তাসেম জিজ্ঞাস করলেন , আপনাদের এই কথার দলীল কি ?
তারা বললেন যে , ওজুর আয়াতে হাত বলতে হাতের কনুই পর্যন্ত বোঝান হয়েছে ।

" --- তোমরা তোমাদের মুখমণ্ডল এবং হস্তসমূহকে কনুই পর্যন্ত ধৌত কর --- ।
সূরা - মায়িদাহ / ৬ ।

অর্থাৎ পুরো দরবারে সকলেই একমত যে , চোরের হাত কাটা হবে ।
কিন্ত মূল সমস্যা হল এটাই যে , চোরের হাত ঠিক কোথা থেকে কাটতে হবে - এ বিষয় দরবারের সকল ফকীহগন এবং আলেমগন কিছুতেই ঐক্যমতে পৌঁছাতে পারছিলেন না ।

একাংশ বলছিলেন , হাত কাটতে হবে কব্জি পর্যন্ত এবং অপরাংশ বলছিলেন হাতের কনুই পর্যন্ত !
খলীফার দরবারে বেশ শোরগোল পড়ে গেল । চুরি করার শাস্তি সম্পর্কে সকলেই একমত। কিন্ত শাস্তি কার্যকরের পদ্বতি নিয়ে কেউই একমত হতে পারছিলেন না । পুরো বিষয়টি নিয়ে আব্বাসীয় খলীফা মহা ফ্যাসাদে পড়ে গেলেন । সাধারন জনতার নিকটে ইসলামের খলীফার ভাবমূর্তি সাংঘাতিক ভাবে হেয় হয়ে যাবে । সামান্য ব্যাপার নিয়ে খলীফার কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে গেল ।

শেষ পর্যন্ত উপায় না পেয়ে আব্বাসীয় খলীফা মো’তাসেম বাধ্য হয়ে পবিত্র কোরআনের বৈধ ওয়ারীশ এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সাঃ) কতৃক নির্বাচিত সপ্তম ইমাম মুহাম্মদ ইবনে আলী ইমাম জাওয়াদ (আঃ) এর কাছে এ ব্যাপারে সুস্ঠ সমাধানের জন্য শরনাপন্ন হলেন ।

" -- হে রাসুলের সন্তান ! এখন আপনার মতামত কী ?
ইমাম (আঃ) বললেন যে , এরাতো বললই , আমি এই ব্যাপারে আর কিছুই বলতে চাচ্ছি না ।
মো’তাসেম পীড়াপীড়ি করতে লাগলেন । বললেন যে , আমরা খুবই নিরুপায় হয়ে পড়েছি !
এবং কসম খেলেন যে , অবশ্যই আপনাকে মতামত দিতে হবে ।
মুহাম্মদ ইবনে আলী আল জাওয়াদ (আঃ) বললেন , যেহেতু কসম খেয়েছ তাই আমার মতামত বলছি । এরা সকলেই সম্পূর্ন ভুল সিদ্ধান্ত দিয়েছে । কেননা চোরের শুধুমাত্র আঙ্গুলের কিছুটা অগ্রভাগ কাটা যাবে ,আর সমস্ত হাত অবশিষ্ট থাকবে

মো’তাসেম বললেন , হে রাসুলের সন্তান ! এই কথার দলীল কী ?
ইমাম জাওয়াদ (আঃ) বললেন , যেহেতু রাসূল (সাঃ) বলেছেন , যুগপৎভাবে সাতটি অঙ্গের মাধ্যমে সেজদা সম্পাদিত হয় -
কপাল , দুই হাতের তালু , দুই হাঁটু এবং পায়ের দুই বৃদ্ধাংগুলি ।
সুতরাং যদি চোরের হাতের কব্জি অথবা কনুই থেকে কেটে ফেলা হয় তাহলে সেজদার জন্য হাতই অবশিষ্ট থাকে না ।

এ ছাড়াও আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেছেন -

" -- আর এই যে , সেজদার স্থানগুলো আল্লাহর জন্য । তাই আল্লাহর সাথে কাউকে আহবান কর না -- " ।
সূরা - জিন / ১৮ ।

এবং আল্লাহকে আহবানের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে নামাজ এবং সেজদা নামাজের প্রধানতম একটি আমল । অতএব হাতটি কেটে ফেললে সে সেজদা দেবে কিভাবে ! সুতরাং যা আল্লাহর জন্য তা কাটা যাবে না " ।

দরবারে তখন পিনঃপতন নিস্তব্দতা । খলীফা বাহাদুরের নামকরা বিখ্যাত ফকীহগন এবং আলেমগন মাথা নীচু করে বসে আছেন । কারও মুখে টুঁ শব্দটি নেই ।
নীরবতা ভঙ্গ করে ইবনে আবি দাউদ বলেন যে , মো’তাসেম তখনই ইমাম জাওয়াদের (আঃ) দলীলকে যুক্তিযুক্ত মনে করে তা গ্রহণ করেছিলেন ।

আর ইমামের (আঃ) নির্দেশ মোতাবেক চোরের আঙ্গুলের কিছুটা অগ্রভাগ কেটে ফেলার নির্দেশ দেয়া হয় ।
দরবারে উপস্থিত গন্যমান্য ফকীহগন - যারা ভুল সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন ,উপস্থিত জনগণের সামনে প্রচন্ড অপমানিত বোধ করলেন । আর এতটাই লজ্জিত হয়েছিলেন যে , সকলেই সেখানে নিজের মৃত্যু কামনা করেছিলেন ।
সূত্র - তাফসীরে আইয়াশী , খন্ড - ১ম , পৃ. ৩১৯ / বিহারুল আনওয়ার , খন্ড - ৫০তম ,পৃ. ৫ ।

প্রিয় পাঠক ,
গাদীর এ খুমের ময়দানে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সাঃ) কতৃক মনোনীত , নির্বাচিত ও ঘোষিত নেতা বা ইমাম পরিত্যাগ করে যারা মনুষ্য কতৃক নির্বাচিত ইমাম বা উলিল আমরের খপ্পরে পড়বেন তারাই এই জাতীয় সংকটে পড়তে বাধ্য হবেন ।
আরও পরিস্কার ভাবে বলতে গেলে বলতে হয় যে , রাসুলের (সাঃ) ইন্তেকালের পরেই আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সাঃ) কতৃক সম্পূর্ন অনুমোদনহীন অবৈধ বনু সকীফার নেতৃত্বের গর্ভ থেকে জন্ম নেওয়া অবৈধ খেলাফতের জন্য সমগ্র মুসলিম উম্মাহর আজ এই করুন দশা ।
আল্লাহর রাসুলের (সাঃ) পবিত্র আহলে বায়েতকে (আঃ) পরিত্যাগ করার জন্যই মুসলিম উম্মত আজ হাজার হাজার মাযহাব বা ফেরকায় বিভক্ত হয়ে গেছে । এটার বাস্তব চিত্র ---
আল্লাহ এক ,
কোরআন এক ,
রাসুল এক ।
তাহলে ইসলাম ধর্মে কেন এত বিভক্তি ?
সহজ সরল জবাব -- রাসুলের (সাঃ) পবিত্র আহলে বায়েতকে (আঃ) পরিত্যাগ করার দুঃখজনক পরিনাম ।

আজ আর নয় -
সকলেই ভাল ও সুস্থ থাকুন --
এই কামনায় ---


ইয়া সাহেবুজ্জামান (আঃ) আদরিকনী আদরিকনী ,
সালামুন আলাইকুম ইয়া সাহেবুজ্জামান (আঃ) ইবনে হাসান আসকারী (আঃ) ওয়া আজ্জিল ফারাজাহুম ,
আল্লাহুমা সাল্লে আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলে মুহাম্মাদ ওয়া আজ্জিল ফারাজাহুম ,
আল্লাহুম্মাল আন কাতালাহ আমিরিল মুমিনিন (আঃ) ।

লেখাটি শাবিস্তান বার্তা সংস্থার লেখা থেকে সংকলিত ও সংগৃহীত ।

"আল্লাহুম্মা সাল্লিআলা মুহাম্মদিঁউ ওয়া আলা আলি মুহাম্মদিন ....... ইন্নাকা হামীদুম্ মাজীদ।" ---- আর এই জন্যই নামাজে দরুদ পড়ে আমাদের এই স্বীকৃতি দিতে হয় যে মুহাম্মদ(সঃ)-এর পর তাঁর "আল" বা রক্তজ বংশধরই (১২জন ইমাম) আমাদের ইমাম। রসূলের (সঃ) পর কিয়ামত পর্যন্ত এঁরাই হলেন বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ ব‍্যক্তিগণ এবং নেতৃবৃন্দ। এঁদের নেতৃত্বই আল্লাহ-নির্ধারিত ও নির্বাচিত একমাত্র নির্দিষ্ট নেতৃত্ব। অন্য যেকোনো নেতৃত্বই গোমরাহী তথা ভ্রান্তি। তাই আমাদের জন্য আল্লাহ-নির্দেশিত "মুয়াদ্দাতা ফিল কুরবা"রই তাৎপর্য এটাই।


Subscribe Our Youtube Channel

Disqus Comments