১৩ই রজব ইমাম আলীর জন্মদিন

শুভ জন্মদিন -- শুভ জন্মদিন -- শুভ জন্মদিন --
সকলের প্রতি রইল প্রানঢালা অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা ---

এসেছিলেন তিনি পৃথিবীর সর্ব উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন সর্বশক্তিমান আল্লাহর পবিত্র গৃহ কাবা থেকে । চলেও গেলেন তিনি আল্লাহর পবিত্র গৃহ মসজিদ থেকে !

বিষাক্ত তরবারী দিয়ে মানুষটিকে খুন করে ফেলা হলো,
কি অন্যায় ছিল তাঁর ?
কারও সম্পত্তি বা অর্থ আত্মসাত করেছিল ?
চরমতম শত্রুও এ অভিযোগ করতে পারে নি ।
সারাটা জীবন নি:স্বার্থ ভাবে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের (সা:) সকল হুকুম তামিল করে গেলেন ।

মানুষটি শুধু একা নয় ।
তাঁর পত্নী থেকে শুরু করে সন্তান , নাতি , বংশধর সকলেই ইসলামের জন্য জীবন কুরবানি দিয়ে গেল । একমাত্র এই মানুষটির পরিবার পরিজনের বিশাল কুরবানীর জন্যই --
" ইসলাম জিন্দা হোতা হ্যায় হার কারবালাকা বাদ --- " ।

মানুষটির বংশের পর পর এগার জন পুরুষকে খুন করা হলো ।
সর্বশেষ বংশধর ইমাম মাহদী (আ:) কে আল্লাহ যদি হেফাজত না করতেন তাহলে তাঁকেও খুন করা হতো ।

প্রিয় পাঠক ,
আজ ১৩ই রজব , ১৪৩৯ হিজরী ।
আমুল ফিলের ত্রিশ বছর পরে এই ১৩ই রজবে আল্লাহ কতৃক প্রথম ইমাম হযরত আলী ইবনে আবু তালিব (আঃ) এই ধরনীতে পদার্পন করেছিলেন ।

আসুন , কিভাবে কোথায় এই মানুষটির জন্ম হয়েছিল ইত্যাকার বিষয়াদি সম্বন্ধে জেনে নেই --

ইমাম হযরত আলী (আঃ) এর জন্ম ইতিহাস -
নাম - হযরত আলী ইবনে আবু তালিব (আঃ) ।
পিতার নাম - হযরত ইমরান , যিনি আবু তালিব (আঃ) নামে সর্বাধিক পরিচিত ।
মাতার নাম - ফাতেমাহ বিনতে আসাদ (সাঃআঃ) ।
জন্ম তারিখ - ১৩ই রজব , আমূল ফিলের ত্রিশ বছর পর ।
জন্মস্থান - পবিত্র ক্বাবা গৃহের ঠিক অভ্যন্তরে ।
শাহাদাত - ২১শে রমজান , ৪০ হিজরী ।
জীবনকাল - ৬৩ বছর ২ মাস ৭ দিন ।
বেলায়েত লাভ - ১৮ই জিলহজ্ব , ১০ম হিজরী ।
ইমামতকাল - ৩০ বছর ।
শাহাদাতের স্থান - কুফা মসজিদের মেহরাবে ।
হত্যাকারী - আব্দুর রহমান ইবনে মুলজেম (লানত) ।
সমাধিস্থল - নাজাফে আশরাফ , ইরাক ।

হযরত আলী (আঃ) এর মায়ের নাম ফাতেমাহ বিনতে আসাদ (সাঃআঃ) , তিনি ছিলেন আসাদ ইবনে হাশেমের কন্যা । আরবের রীতি অনুযায়ী ওনার নাম - ফাতেমাহ বিনতে আসাদ (সাঃআঃ) ।
ওনার স্বামীর নাম - হযরত ইমরান , আবু তালিব (আঃ) বলে অধিক পরিচিত । তিনি মহানবী (সাঃ) এর প্রতি প্রথম ঈমান আনয়নকারী মহিলা । নবীজীর (সাঃ) নবুয়তের ঘোষনার পূর্বে তিনি ইবরাহীম (আঃ) এর ধর্মের অনুসারী বা শীয়া ছিলেন । তিনি একজন পুতঃপবিত্রা নারী ছিলেন । সেদিন ছিল শুক্রবার ,
রজব মাসের ১৩ তারিখ , মহানবী (সাঃ) এর নবুয়ত ঘোষনার ১০ বৎসর পূর্বে এবং হিজরতের ২৩ বছর আগের এমনই এক দিনে , ইমাম হযরত আলী (আঃ) গর্ভে থাকা অবস্থায় ওনার প্রসব বেদনা উঠলে তিনি পবিত্র ক্বাবা গৃহে চলে যান এবং কাবা গৃহের দেয়ালের নিকট বসে পড়েন এবং আল্লাহকে উদ্দেশ্য করে বলেন ,
"প্রভু হে , আমি তোমার প্রতি , তোমার পক্ষ থেকে নাযিলকৃত সকল কিতাবের প্রতি এবং এ ঘরের পুনঃনির্মাতা দাদা ইবরাহীম (আঃ) এর কথার প্রতি পরিপূর্ন ঈমান রাখি ।
প্রভু হে , এ ঘরের নির্মাতার সম্মাানে এবং আমার পেটে যে শিশু আছে তার ওসিলায় এ শিশুর জন্মদান আমার জন্য সহজ করে দাও । "
কিছু সময় অতিবাহিত হবার পর পবিত্র ক্বাবা গৃহের দেয়ালে ফাটল সৃষ্টি হল এবং তিনি ঐ ফাটলের পথ দিয়ে ক্বাবা গৃহের অভ্যন্তরে প্রবেশ করা মাত্রই ফাটলটি পুনরায় জোড়া লেগে গেল ।
তখন ওখানে উপস্থিত অন্যান্যরা ক্বাবা গৃ্হের দরজা শত চেষ্টা করেও খুলতে পারলেন না ।
সবাই বুঝে গেলেন যে , এটা মহান আল্লাহর বিশেষ হিকমত ।
অবশেষে চারদিন পর পবিত্র ক্বাবা গৃহের পূর্বের ফাটলকৃত জায়গার মধ্য দিয়ে হযরত ফাতেমা বিনতে আসাদ (সাঃআঃ) এক পবিত্র নবজাতকসহ পবিত্র ক্বাবা গৃহ থেকে বের হয়ে আসলেন ।
নবজাতক সহ বের হয়ে আসা মাত্র পুনরায় ক্বাবা গৃহের ফাটলকৃত অংশটি পূর্বের মত জোড়া লেগে গেল ।
মহান আল্লাহর তরফ থেকে শিশুটির নাম ঠিক হল "আলী "।
যে নাম জগতে ইতিপূর্বে কেউই রাখে নি ।
পবিত্র ক্বাবা গৃহের অভ্যন্তরেই ইমাম আলী (আঃ) জন্মগ্রহন করেন ।
সূত্র - কাশাফুল গ্বাম্মাহ , ১ম খন্ড , পৃ- ৯০ ।

এ মহান বিরল ফযিলত সম্পর্কে বার ইমামীয়া শীয়া ইতিহাসবিদ ও মুহাদ্দিসগন এবং বংশধারার বিশ্লেষকগন নিজ নিজ কিতাবে উল্লেখ করেছেন ।
অধিকাংশ সুন্নি আলেমগনও এ সত্যটি স্বীকার করেছেন এবং এটিকে একটি নজিরবিহীন ফযিলত বলে উল্লেখ করেছেন ।
সূত্র - মুরুজুয যাহাব , ২য় খন্ড , পৃ- ৩৪৯ / শাহরুশ শেফা , ১ম খন্ড , পৃ- ১৫১ ।

হাকেম নিশাপুরী বলেন , " কাবা গৃহের অভ্যন্তরে আলী (আঃ) এর জন্মের বিষয়টি আমাদের নিকট তাওয়াতুর আকারে পৌছেছে " ।
তাওয়াতুর মানে হল , প্রতিটি স্তরে এতো বেশী সংখ্যক সূত্রে বর্নিত যে , কোন মিথ্যা রচনার জন্য তাদের পক্ষে ঐক্যবদ্ব হওয়া বিচার বুদ্বির দৃষ্টিতে অসম্ভব ।
সূত্র - মুস্তাদরাকে হাকেম , ৩য় খন্ড , পৃ- ৪৮৩ ।

বিখ্যাত তাফসীরকারক আলূসী বাগদাদী লিখেন , " পবিত্র ক্বাবা গৃহের অভ্যন্তরে ইমাম আলী (আঃ) এর জন্ম বিশ্বের জাতিসমুহের নিকট সুপরিজ্ঞাত ও বিখ্যাত ঘটনা এবং এ পর্যন্ত সমগ্র সৃষ্টিকুলের অন্য কেউই এই মহান ফযিলত লাভ করেন নি " ।
সূত্র - শারহে ক্বাছিদায় - আবদুল বাক্বী আফেন্দী , পৃ - ১৫ / নবীর বংশধর , (মোনা খানম) , পৃ- ১৮-২২ (আজ্ঞুমানে কাদেরীয়া চট্টগ্রাম) / কাতেবানে ওহী , পৃ- ১৫২ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) / হযরত আলী , পৃ- ৭ , (এমদাদীয়া লাইব্রেরী) / আশারা মোবাশশারা , পৃ- ১৫৩ , (এমদাদীয়া লাইব্রেরী) / দৈনিক যুগান্তর , বাংলাদেশ , ১৯শে আগষ্ট , ২০০৫ / সিরাতে উলুবিয়া , খন্ড - ১ , পৃ- ২১ / কউকাবে দুররী , পৃ- ৮৭ / আরজাহুল মাতালেব , পৃ- ৪৪৫ / মুস্তাদরাক হাকেম , খন্ড - ৩ , পৃ- ৪৮৩ / মাতালেবাস সাউল , পৃ- ১১ / সিরাতে হালবিয়া , খন্ড - ১ , পৃ- ১৬৫ / সিবতে ইবনে আল জাওজি , পৃ- ৭ / ফুসুল আল মোহিম্মাা , পৃ- ১৪ / কেফায়াতুত তালেব , পৃ- ২৬১ , ৪০৬ / নুরুল আবসার , পৃ- ৭৫ / নূজহাত আল মাজালিস , খন্ড - ২ , পৃ- ২০৪ / ইযাযাতুল খিফা , (শাহ ওয়ালিউল্লাহ) , খন্ড - ২ , পৃ- ৪৮৭ ।

-বেলায়াতের দ্যুতি -
মূল লেখক - আয়াতুল্লাহ জাফর সুবহানী ,
বাংলা অনুবাদ - আব্দুল কুদ্দুস বাদশা ও মোঃ মাঈনউদ্দিন ,
সম্পাদনা - নূর হোসেন মজিদী ,
পৃষ্ঠা - ২৭ ছায়া অবলম্বনে লিখিত ।
এবং
-মারেফাতে ইমামত ও বেলায়েত ,
সংকলনে - মোঃ নাজির হোসাইন ,
পৃষ্ঠা - ৮৮ থেকে ।


Subscribe Our Youtube Channel

Disqus Comments