খায়বারে আল্লাহর সিংহের অলৌকিক জয়

১৪৩০ বছর আগে সপ্তম হিজরির এমন দিনে ২৪ ই রজব ইসলামের ইতিহাসের প্রবাদ পুরুষ প্রথম ইমাম আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী (আঃ) জয় করেছিলেন ইহুদি অধ্যুষিত খায়বার অঞ্চল ।

খায়বারের অবস্থান ছিল মদীনা থেকে ১৫০ কিলোমিটার উত্তরে দামেস্কগামী সড়কের কাছে । শের এ খোদা বা আল্লাহর সিংহ নামে খ্যাত হযরত আলী (আঃ) একাই জয় করেন এই খায়বার । ভয়ঙ্কর যোদ্ধা হিসেবে খ্যাত ইহুদী সেনাপতি মারহাব ও আন্তারকে মল্লযুদ্ধে হারিয়ে এই বিজয়ের সূচনা করেছিলেন ইমাম আলী (আঃ) ।

আল্লাহর সিংহ একাই নিজ হাতে খায়বার দুর্গের বিশাল দরজাটিকে গোড়া থেকে উপড়ে ফেলেছিলেন । অথচ এই দরজা বা তোরণ খোলা ও বন্ধের কাজে দরকার হত বেশ কয়েক জন শক্তিশালী প্রহরীর প্রচন্ড দৈহিক শক্তিমত্তা ।

ইহুদীদের ষড়যন্ত্র ও বিদ্রোহের কথা জানতে পেরে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেন । ইসলামের বিরুদ্ধে সার্বক্ষণিক ষড়যন্ত্রে নিয়োজিত ইহুদীরা মদীনার ইসলামী রাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি ভঙ্গ করে মূর্তি পূজারি আরবদেরকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লেলিয়ে দেয়ার জন্য উস্কানি দিয়ে আসছিল । তারা মদীনায় হামলার জন্য মূর্তি পূজারিদেরকে প্রচুর অর্থ দিচ্ছিল ।

বিশ্বনবীর (সাঃ) নির্দেশে দশ হাজার সশস্ত্র ইহুদীকে মোকাবেলার জন্য ১৫০০ মুসলিম মুজাহিদ আকস্মিকভাবে খায়বার অঞ্চলে হাজির হন ।
কয়েকটি ইহুদী গোত্রের নেতৃবৃন্দ বশ্যতা স্বীকার করেন । অবশ্য ইহুদীরা কোন কোন দুর্গ মারাত্মক প্রতিরোধ গড়ে তোলে । ফলে ইসলামী সেনারা ওই দুর্গগুলো অবরোধ করে । কয়েক সপ্তাহের অবরোধের ফলে প্রায় সবগুলো দুর্গের ইহুদীরা আত্মসমর্পণ করে ।


কিন্তু ইহুদীদের প্রধান দুর্গ কামুস প্রতিরোধ অব্যাহত রাখে । এমনকি এই দুর্গের ইহুদীরা রাসূলের (সাঃ) সাহাবিদের অভিযানগুলোকে ছত্রভঙ্গ করে দেয় এবং ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয় মুসলিম বাহিনী ।

অবশেষে বিশ্বনবী (সাঃ) মুসলিম বাহিনীর নেতৃত্বের ভার অর্পণ করেন মহাবীর আলীর (আঃ) হাতে ।
এ সম্পর্কে মহানবী (সাঃ) আগের দিন বলেছিলেন , আগামীকাল আমি এমন একজনের হাতে (মুসলিম বাহিনীর) সেনাপতিত্ব অর্পণ করব যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে (দরুদ) ভালবাসেন এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলও (দরুদ) তাঁকে ভালবাসেন , সে এমন এক নির্ভীক হামলাকারী যে কখনও পিছু হটে না ।

পরের দিন ভোরে রাসূল (সাঃ) “নাদ-ই আলীইয়ান মাজহার আল আজাব” শীর্ষক প্রার্থনা করেন । এ দোয়ায় আলীকে (আঃ) ‘বিস্ময়রাজির প্রকাশ’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে ।

হযরত আলী (আঃ) চোখের অসুস্থতার কারণে এই অভিযানে তখনও যোগ দিতে পারেন নি । বিশ্বনবী (সাঃ) তাঁর পবিত্র জিহ্বার পানি বা লালা প্রিয় চাচাত ভাই ও জামাতার চোখে লাগিয়ে দিলে সুস্থ হয়ে যায় সেই দুই চোখ ।

এরপরের অলৌকিক বীরত্বপূর্ণ ঘটনা আজও ইতিহাস হয়ে আছে ।
বিশ্বনবী (সাঃ) আত্মসমর্পণকারী ইহুদীদের শান্তিতে বসবাসের অনুমতি দেন ।
এই অভিযানের আগে বিশ্বনবী (সাঃ) ব্যক্তিগত উপহার হিসেবে লাভ করেছিলেন ‘ফাদাক’ নামক বাগান ।
এই ফাদাক অর্জনের জন্য মুসলমানদেরকে কোন প্রকার যুদ্ধ করতে হয়নি । তিনি আল্লাহর সরাসরি নির্দেশে ফাদাক দান করেন তাঁর একমাত্র প্রিয় কন্যা হযরত ফাতিমা (সাঃআঃ) কে । নবী-নন্দিনী এই বাগানের আয় দিয়ে দরিদ্র ও অভাবগ্রস্তদের সহায়তা করতেন ।
কিন্তু রাসূলের (সাঃ) ইন্তেকালের পর এই ফাদাকের বাগান সম্পূর্ন অবৈধ ভাবে কেড়ে নেয়া হয়েছিল তাঁর কাছ থেকে।
এরপর বহু বছর পরে অবশ্য দ্বিতীয় ওমরের শাসনামলে ফাদাক ফিরিয়ে দেয়া হয় বিশ্বনবীর (সাঃ) পবিত্র আহলে বাইত (আঃ) বা নবী বংশের পবিত্র সদস্যদের কাছে ।


সালামুন আলাইকুম ইয়া সাহেবুজ্জামান (আঃ) ইবনে হাসান আসকারী (আঃ) ওয়া আজ্জিল ফারাজাহুম ,
আল্লাহুমা সাল্লে আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলে মুহাম্মাদ ওয়া আজ্জিল ফারাজাহুম ,
আল্লাহুম্মাল আন কাতালাহ আমিরিল মুমিনিন (আঃ) ।

লেখাটি সংগৃহীত ।


Subscribe Our Youtube Channel

Disqus Comments