নবী রাসুলগন (সাঃ) এবং তাঁদের সম্পত্তি ও উত্তরাধীকার

নবী রাসুলগন (সাঃ) কি কোন উত্তরাধীকার রেখে যান না ? আসুন দেখে নেয়া যাক , "সম্পত্তি ও উত্তরাধীকার" সম্পর্কে পবিত্র কোরআনের দষ্টিভঙ্গি কি ।

মহানবীর (সাঃ) ইন্তেকাল পর পরই হযরত আবু বকর নবীকন্যা হযরত ফাতেমা যাহরাকে (সাঃআঃ) মহানবীর (সাঃ) উত্তরাধীকার লাভে বঞ্চিত করার জন্য একটি হাদিসের আশ্রয় গ্রহন করেন ।

হযরত আবু বকর কতৃক বর্ননাকৃত হাদিসটির মূল বক্তব্য ছিল এরুপ যে , নবীরা নিজেদের থেকে কোন উত্তরাধীকার রেখে যান না , তাঁদের রেখে যাওয়া পরিত্যক্ত সম্পত্তি তাঁদের ইন্তেকালের পর ছাদাক্বাহ হিসাবে গন্য ।

খলীফা বাহাদুর হযরত আবু বকর তার নিজের বর্ননাকৃত এই হাদিসটির স্বপক্ষে নূন্যতম দুইজন স্বাক্ষীও উপস্থিত করতে পারেন নাই । তিনি নিজেই এই হাদিসের একমাত্র বর্ননাকারী এবং তিনি নিজেই এই হাদিসের একমাত্র সাক্ষীও বটে !

পাঠক ,
খলীফা বাহাদুরের বর্ননাকৃত এই হাদিসটির ব্যাপারে পবিত্র কোরআন কি বলে -- প্রথমে সেটা পর্যালোচনা করা যাক । কারন শেষ বিচারে একমাত্র কোরআনই হল বাতিল , ভুয়া , জাল বা নকল হাদিস থেকে সহীহ হাদিস পৃথকীকরন করার সর্বোৎকৃষ্ট কষ্টিপাথর । আর এক্ষেত্রে কোরআন যদি এই হাদিসটিকে সত্যায়ন না করে তাহলে আমরা সেটাকে সহীহ হাদিস বলে মেনে নিতে পারি না

এখানে হাদিসের বর্ননাকারী যদি হযরত আবু বকরও হয় সেটা মূল বিবেচ্য বিষয় নয় ।
মূল কথা হল যে , যে হাদিস কোরআনের সাথে মিলবে না সেই হাদিস চোখ বন্ধ করে ডাষ্টবিনে ছুড়ে ফেলাটাই উত্তম ।

চ্যালেজ্ঞ সহকারে বলা যাচ্ছে যে , পবিত্র কোরআন ও ইসলামের উত্তরাধীকার বিধি - বিধানের দৃষ্টিতে নবীগনের সন্তানবর্গ ও ওয়ারীশদেরকে উত্তরাধীকার আইন থেকে বঞ্চিত করা সম্পূর্ন অবৈধ ও অযৌক্তিক কাজ ।

যতক্ষন পর্যন্ত এমন কোন অকাট্য দলীল না থাকে , যা দ্বারা উত্তরাধীকারের আয়াতসমূহকে রহিত বা বাতিল বলে ঘোষনা দেয়া যায় , ততক্ষন পর্যন্ত উত্তরাধীকারের সামগ্রিক বিধান বা আইন নবী রাসুলগনের সন্তানবর্গ ও ওয়ারীশগনসহ সকলের জন্য বহাল ও কার্যকর থাকবে । কেননা পবিত্র কোরআনের কোন বিধান হাদিস দিয়ে বাতিল অথবা রহিত করা মোটেই বৈধ নয় ।

আসলে ওদেরকে প্রশ্ন করা উচিত যে ,
১) -
নবী রাসুলগনের সন্তানগন কেন তাঁদের পিতামাতার রেখে যাওয়া সম্পত্তির উত্তরাধীকার লাভ করবেন না ?
২) -
নবী রাসুলগনের ইন্তেকালের সাথে সাথে তাঁদের রেখে যাওয়া বাড়িঘর , অন্যান্য স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি তাঁদের সন্তানগনের কাছ থেকে কেন কেড়ে নেওয়া হবে ?
৩) -
নবী রাসুলগনের সন্তানগন কি এমন অপরাধ করেছেন যে , তাঁদের ইন্তেকালের পর সকলে অবিলম্বে স্বীয় বাড়িঘর বা সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হবেন ?

পাঠক ,
সবচে বিস্ময়ের বিষয় হচ্ছে যে , পবিত্র কোরআন বর্ননাকৃত এই হাদিসটির ব্যাপারে সম্পূর্ন বিপরীত কথা বলে ।

হযরত ইয়াহীয়া (আঃ) কতৃক হযরত যাকারিয়া (আঃ) থেকে উত্তরাধীকার লাভের বিষয় বলা হচ্ছে ---

হযরত যাকারিয়া (আঃ) বলেন ,
"--- এবং নিশ্চয়ই আমি আমার পর আমার আত্মীয় স্বজন থেকে (বিপথগামিতার) আশংকা করি এ অবস্থায় যে , আমার স্ত্রী বন্ধা । সুতরাং তুমি তোমার নিকট থেকে আমাকে উত্তরাধীকারী দান কর । যে আমার ও ইয়াকুবের বংশের উত্তরাধীকারী হবে । এবং হে আমার প্রতিপালক ! তাকে তোমার সন্তষ্টচিত্ত (বান্দা) করিও ---- " ।
সুরা - মারইয়াম - ৫ / ৬ ।

খেয়াল করুন , উপরোক্ত আয়াতে হযরত যাকারিয়া (আঃ) আল্লাহর নিকট একজন সন্তান চেয়েছিলেন , যে সন্তান তাঁর উত্তরাধীকার হবেন । কারন তিনি তাঁর আত্মীয় স্বজনদের অনেককেই ভয় পাচ্ছিলেন যে , তাঁর সহায় সম্পত্তি হয়ত ওদের হাতে চলে যাবে ।

"--- এবং সুলায়মান দাউদের উত্তরাধীকারী হয়েছিল --- " ।
সুরা - নামল / ১৬ ।

মনযোগ সহকারে এই আয়াতটি পড়ুন ---
" --- তোমাদের আদেশ দেওয়া হয়েছে যে , যখন তোমাদের মধ্যে কারও সম্মুখে মৃ্ত্যু এসে দাড়ায় এবং সে যদি কিছু ধন সম্পত্তি ত্যাগ করে যায় , তবে পিতামাতা এবং আত্মীয়দের জন্য ন্যায়সঙ্গতভাবে অসিয়ত করে যাবে । যা সাবধানীদের উপর এক পরম কর্তব্য ----- " ।
সুরা - বাকারা / ১৮০ ।

পবিত্র কোরআনে মৃত্যুর পূর্বে অসিয়ত করে যাবার কথা পরিস্কার বলা আছে ।

এই হাদিসটির ব্যাপারে ইবনে আবিল হাদীদ লিখেছেন ,
মহানবীর (সাঃ) ইন্তেকালের পর হযরত আবু বকর কতৃক বর্ননাকৃত এই হাদিসটির বর্ননাকারী তিনি একাই ছিলেন । তিনি ছাড়া আর কেউ তা বর্ননা করেন নি ।
সূত্র - শারহে নাহজুল বালাঘা , ইবনে আবিল হাদীদ , ১৬তম খন্ড , পৃ - ২২৭ ।

অতএব ,এটা কি সঠিক যে , প্রথম খলীফা বাহাদুর , যিনি স্বয়ং এই মামলার বাদী ছিলেন , তিনি এমন একটি হাদিসকে প্রমান হিসাবে উপস্থাপন করলেন যে , একমাত্র তিনি ছাড়া অন্য কেউই মহানবীর (সাঃ) নিকট থেকে এই জাতীয় কথা কস্মিনকালেও শুনেন নি !

এখন প্রশ্ন হল যে , প্রথম খলীফা বাহাদুর সব জেনে শুনে নবীকন্যা ফাতেমা যাহরার (সাঃআঃ) বৈধ পৈত্রিক সম্পত্তি "বাগে ফাদাক" অবৈধভাবে কেন কেড়ে নিলেন ?
এই বিষয় পরে কোন একদিন আলাপ হবে , ইনশা আল্লাহ ।


ইয়া সাহেবুজ্জামান (আঃ) আদরিকনী আদরিকনী ,
আল্লাহুমা সাল্লে আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলে মুহাম্মাদ ওয়া আজ্জিল ফারাজাহুম ,
আল্লাহুম্মাল আন কাতালাহ আমিরিল মুমিনিন (আঃ) ।

--- বেলায়েতের দ্যুতি ,
মূল লেখক - আয়াতুল্লাহ জাফর সুবহানী ,
বাংলা অনুবাদ - আব্দুল কুদ্দুস বাদশা ও মোঃ মাঈনউদ্দিন ,
সম্পাদনা - নূর হোসেন মজিদী ,
পৃ - ২৩১ ছায়া অবলম্বনে লিখিত ।


Subscribe Our Youtube Channel

Disqus Comments